রমজান শুরুর তারিখ জানালো আমিরাত
পবিত্র রমজান মাস শুরুর তারিখ জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির জোর্তিবিদ্যার গণনা অনুযায়ী, এ বছর রমজান মাস ৩০ দিনের হবে।
আরব ইউনিয়ন ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড স্পেস সায়েন্সেসের একজন সদস্য ইব্রাহিম আল জারওয়ান বলেছেন, আগামী ১৩ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে পারে। আর পবিত্র ঈদুল ফিতর হতে পারে ১৩ মে বৃহস্পতিবার।
এ বছর রমজান মাসে রোজার সময় কতক্ষণ হবে সেটাও জানিয়েছেন এই জোর্তিবিদ। আবুধাবিতে প্রথম রোজার দিন সেহেরির শেষ সময় হচ্ছে ভোর ৪টা ৪৩ মিনিট। আর ইফতার হবে সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে। ফরে প্রথম দিনের রোজা হচ্ছে ১৪ ঘণ্টা ৪ মিনিট দীর্ঘ।
৩০ রমজানে গিয়ে সেহেরির শেষ সময় হবে ভোর ৪টা ১৫ মিনিট। আর ইফতার হবে সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিটে। ফলে তখন রোজার দৈর্ঘ্য হবে ১৪ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট।
এ
মন্তব্য করুন
শবেকদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া
আজকে পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাত, মর্যাদাপূর্ণ রাত। এ রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। ইসলামের দৃষ্টিকোণে শবেকদরের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এ রাতে মানবতার মুক্তির মানুষের জীবন-বিধান মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরান নাজিল হয়। পবিত্র কোরানে এই রাতকে ঘিরে পূর্ণাঙ্গ একটি সুরা নাজিল হয়েছে। এ রাতে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে থাকে। এ জন্য অনেকেরই শবেকদরের রাতের নামাজের নিয়ম, কীভাবে পড়তে হয়, কোন দোয়া দিয়ে পড়তে হয় এবং পাশাপাশি এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে জানতে চায়।
জেনে নিন কদর রাতের নামাজের নিয়ম, দোয়া ও ফজিলত সম্পর্কে-
‘শবেকদর’ ফারসি ভাষা আর কোরআনের ভাষায় এ রাতের নাম ‘লাইলাতুল কদর’ অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা বা মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো- ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। যেহেতু এ রাতের মাধ্যমে আমাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে থাকে তাই আমাদের সকল মুসলমানদের উচিত ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে দেয়া।
শবে কদরের নামাজের নিয়ম:
শবেকদরের নফল নামাজ দু‘রাকাত করে যত বেশি পড়া যায় তত বেশি ছওয়াব। নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর সুরা ইখলাছ, সুরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সুরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ। এইভাবে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই ভালো।
কেউ যদি উপরে উল্লেখিত সুরাগুলো না পারেন তাহলে সুরা ফাতিহা পড়ার পর যে সুরাগুলো আপনি পারেন তার মধ্য থেকে প্রতি রাকাতে একটি করে সুরা মিলিয়ে নিতে হবে। এছাড়া সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও আপনি পড়তে পারেন। পাশাপাশি রাতের শেষভাগে কমপক্ষে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ার অবশ্যই চেষ্টা করবেন।
>> সঠিক পদ্ধতিতে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে।
>> শবেকদরের জন্য দুই রাকাত নফল নামাজের জন্য নিয়ত করতে হবে। (বাংলা অথবা আরবিতে)
>> আল্লাহু আকবার বলে সানা পাঠ করতে হবে।
>> তারপর সুরা ফাতিহা পাঠ করার পর এর সাথে কুরআনের কোন আয়াত অথবা যে কোন সুরা সংযুক্ত করে পড়তে হবে। (সুরা ইখলাছ, সুরা >> ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সুরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ)
>> এভাবে সাধারণ নামাযের মত করে সুরা পাঠ করার পর রুকু এবং সেজদা দিতে হবে।
>> তারপর প্রথম রাকাতের মতো দ্বিতীয় রাকাত নামাজ আদায় করে তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং মাসুরা পাঠ করে সালাম ফেরাতে হবে।
শবেকদরের নামাজের নিয়ত:
শবেকদরের নামাজ পড়ার সময় আপনি যদি আরবি ভাষা জেনে থাকেন তাহলে আপনি আরবিতে নিয়ত করবেন এবং আপনার যদি আরবি ভাষা না জানা থাকে তাহলে আপনি বাংলাতে শবেকদরের নামাজের নিয়ত করতে পারেন।
তাহলে চলুন আমরা এখন শবেকদরের নামাজের নিয়ত বাংলা ভাষা এবং আরবি ভাষায় জেনে নিই-
শবে কদরের নামাজের নিয়ত আরবি: ‘নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা‘আ-লা- রাক‘আতাই ছালা-তি লাইলাতুল কদর-নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার। শবে কদরের নামাজের বাংলা নিয়তঃ “আমি ক্বেবলামূখী হয়ে আল্লাহ্ এর উদ্দেশ্যে শবে কদরের দু‘রাক‘আত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার।’
পবিত্র শবেকদরের নামাজের সুরা:
শবেকদরের নামাজের কোন সুরা নেই। কিন্তু নামাজের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর সুরা ইখলাছ, সুরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সুরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ। এছাড়া পবিত্র শবে কদরের রাত আমাদের ভাগ্য নির্ধারণী রাত। এই রাতে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা’আলার নিকট সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তাই আমাদেরকে বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে এবং এর পাশাপাশি দোয়া করতে হবে। যদি কেউ এ সকল সুরাগুলো না জেনে থাকেন তাহলে আপনার ইচ্ছামত যে সুরাটি আপনি পারেন সেটি দিয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন।
শবেকদরের দোয়া:
পবিত্র শবেকদরের রাত আমাদের ভাগ্য নির্ধারণী রাত। এই রাতে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা’আলার নিকট সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তাই এই রাতে আমাদেরকে বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে এবং এর পাশাপাশি দোয়া করতে হবে।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে:-
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
এ ছাড়াও আল্লাহ তাআলার ক্ষমা লাভে কুরআনুল কারিমে তিনি বান্দার জন্য অনেক দোয়া তুলে ধরেছেন। যা নামাজের সেজদা, তাশাহহুদসহ সব ইবাদত-বন্দেগিতে পড়ার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। আর তাহলো-
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
উচ্চারণ: ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’
অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)
رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’
অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)
رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণ: ‘রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।’
অর্থ: ‘(হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)
رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।’
অর্থ: হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং তুমি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৬)
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’
অর্থ: হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
উচ্চারণ: ‘সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির।’
অর্থ: ‘আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)
رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا
উচ্চারণ: ‘ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’
অর্থ: ‘হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের পাপ মোচন করুন। আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। তুমিই আমাদের প্রভু।’ (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৮৬)
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমানি।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন।’ (সুরা হাশর : আয়াত ১০)
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়াংছুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)
رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোনাহগুলো ক্ষম করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৩)
লাইলাতুল কদরে যা করণীয়
লাইলাতুল কদর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। আরবি ভাষায় লাইলাতুল অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং কদর শব্দের অর্থ মর্যাদা বা সম্মান। এ ছাড়াও এর অন্য অর্থ ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। এ রাতের মাধ্যমে মুসলমানদের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে থাকে।
লাইলাতুল কদর বা শবেকদর হচ্ছে বছরের শ্রেষ্ঠ রাত। এ রাত হাজার বছরের চেয়ে উত্তম। শবেকদরের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে থাকেন।
এ রাতে ইবাদতের সৌভাগ্য লাভ হলে আল্লাহতায়ালা অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, শবেকদরের রাত্রে দাঁড়ায়, তার আগেকার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি)।
গোনাহ থেকে মাফ চাওয়া : মহান আল্লাহর কাছে গোনাহ থেকে মাফ চাইতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফের দোয়া শিখিয়েছিলেন। রমজানের শেষ দশকে এ দোয়া বেশি বেশি পড়তে হবে-
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুওয়ুন; তুহিব্বুল আ’ফওয়া; ফা’ফু আন্নি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
জামাতে এশা ও ফজর নামাজ আদায় : কদরের রাতের ফজিলত ও বরকত লাভের জন্য বেশির ভাগ মুসলিম সারারাত জেগে নফল নামাজ পড়েন, ইবাদত করে থাকেন। সেক্ষেত্রে জামাতে ফজরের নামাজ পড়া জরুরি। কেননা নফল ইবাদতের চেয়ে ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শবে কদরে এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করতে হবে। কোনোভাবেই যেন জামাতের নামাজ ছুটে না যায়।
কাজা নামাজ পড়া : সারাবছর নানা কারণে অনেক নামাজ কাজা হয়ে যায়। অনেকে সফরে থাকার সময় নামাজ আদায় করতে পারে না। তাই রমজানের শেষ ১০ দিন ফরজ নামাজের কাজা আদায় করা উত্তম।
কোরআন তেলাওয়াত করা : লাইলাতুল কদর রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। আল কোরআনের বিধান পালনের মাধ্যমে এ রাত অতিবাহিত করা উচিত। কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণে ইবাদত-বন্দেগিতে রমজানের শেষ দশক অতিবাহত করা।
ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত থাকা : কদরের রাতে ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত থাকা উচিত। এ রাতটি নির্দিষ্ট নয়, সেহেতু রমজানের শেষ দশকের পুরোটা সময় বিশেষ করে বেজোড় রাতগুলোতে ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকা উচিত। বিবাদে লিপ্ত থাকলে অতীতের সব গুনাহ মাফ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
দোয়া করা : লাইলাতুল কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম রাত। এ রাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহর দরবারে পেশ করা জরুরি। যেন আল্লাহতাআলা বান্দার জন্য সর্বোত্তম ভাগ্য নির্ধারণ করেন এ রাতে।
হাদিস পড়া : লাইলাতুল কদরের রাতে জ্ঞানার্জনের জন্য কোরআন ও হাদিসের পেছনে কিছু সময় ব্যয় করা। যে সামান্য সময়ের মর্যাদা অনেক বেশি।
কম ঘুমানো : রমজানের শেষ দশকের ইবাদাত-বন্দেগি ও ইতিকাফের জন্য বিশ্বনবী ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। কারণ একটাই- লাইলাতুল কদর তালাশ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। কারণ শেষ দশকের যে কোনো বিজোড় রাতেই লাইলাতুল কদর নিহিত থাকে। তাই কম ঘুমিয়ে ইবাদতে মগ্ন থাকতে হবে।
কম খাবার গ্রহণ : রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগি করতে সুস্থ দেহ ও মন প্রয়োজন। বেশি খাওয়া হলে ঘুম ও ক্লান্তিতে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই কম খেতে হবে।
পবিত্র শবে কদর / মসজিদে মসজিদে ইবাদতে মগ্ন মুসল্লিরা
পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ। রমজানুল মুবারকের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতটি আমাদের দেশে শবে কদর হিসেবে পালিত হয়ে থাকে।
লাইলাতুল কদরের মহিমাম্বিত রাতে মসজিদে মসজিদে সারা রাত জেগে মুসল্লিরা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন রয়েছেন। জেগে নফল নামাজ, জিকির-আসগার, কোরআন তিলাওয়াত, তওবাহ-তাহলিল ও দ্বীনি আলোচনায় মশগুল থেকে পার করবেন পুরো রাত। চোখের পানি ফেলে রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
শবে কদর উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানী প্রায় প্রতিটি মসজিদেই মুসল্লিদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া সারাদেশের মসজিদগুলোতেই এদিন বাড়তি ভিড় থাকে। এশার আজানের আগ থেকেই মুসল্লিরা মসজিদে আসা শুরু করেন।
পবিত্র রমজানে যেসব মসজিদে খতমে তারাবি হচ্ছে সেগুলোতে কোরআনে পাকের খতম সম্পন্ন হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত।
হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এই রাতের ইবাদত উত্তম বলে কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন।
লাইলাতুল কদর রাতে করুণাময় আল্লাহর অশেষ রহমত ও নেয়ামত বর্ষিত হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগি করে থাকেন।
পবিত্র রমজান মাসের লাইলাতুল কদরে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বাসা-বাড়ি ও মসজিদে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকেন।
সারাদেশের মুসলমানরা আজ নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পবিত্র এই শবে কদরের রজনী কাটাবেন।
এদিকে পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কদর উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। শবে কদর উপলক্ষে রোববার সরকারি ছুটি থাকবে।
এদিকে পবিত্র শবে কদর ১৪৪৫ হিজরি উদযাপন উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় (বাদ মাগরিব) ‘পবিত্র শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য’শীর্ষক এই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী জামেয়া ইসলামিয়া জামে মসজিদের মুফতি মাওলানা সাকিবুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মহা. বশিরুল আলম।
যেদিন হতে পারে ঈদ
দেখতে দেখতে বিদায়ের পথে পবিত্র রমজান। বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা ঈদুল ফিতর উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর রমজান মাস ৩০ দিনের হতে পারে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব ও তার প্রতিবেশী অনেক দেশে আগামী ১০ এপ্রিল (বুধবার) পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হতে পারে। খবর আলজাজিরার।
সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশে ঈদ অনুষ্ঠিত হওয়ার পরদিন বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে ঈদ উদযাপন করা হয়। সেই হিসেবে আগামী ১১ এপ্রিল ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হতে পারে বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে।
সোমবার (৮ এপ্রিল) মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পালন করা হবে ২৯তম রোজা। ওই দিন শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ।
সোমবার শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখা গেলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পরদিন মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) পবিত্র ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে। চাঁদ দেখা না গেলে আরও একদিন রোজা রাখবেন মুসলমানরা। সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে ১০ এপ্রিল।
ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রত্যেক আরবি মাস ২৯ নাকি ৩০ দিনের হবে, তা নির্ভর করে চাঁদ দেখতে পাওয়ার ওপর। সৌদি আরবের আকাশে সোমবার চাঁদ দেখা গেলে দেশটিতে পবিত্র রমজান মাস ২৯ দিনের হবে। পরদিন (মঙ্গলবার) দেশটিতে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করা হবে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, এ বছর বাংলাদেশে রমজান মাস ৩০ দিনের হতে পারে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানের আবহাওয়া অফিস বলছে ভিন্ন কথা, এবার পাকিস্তানে রোজা ২৯টি হতে পারে। কারণ ৯ এপ্রিল রাতেই দেশটির আকাশে ঈদের চাঁদ দেখা যাবে।
প্রসঙ্গত, ঈদুল ফিতর চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে ইসলামি (হিজরি) ক্যালেন্ডারের দশম মাস শাওয়ালের শুরু হয়। চন্দ্র মাস ২৯ বা ৩০ দিনের হয়ে থাকে। যে কারণে পবিত্র ঈদের তারিখ জানার জন্য ঈদের আগের রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় মুসলমানদের।
চাঁদ দেখা নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞপ্তি
পবিত্র ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণে মঙ্গলবার বৈঠকে বসবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি।
ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সভায় ১৪৪৫ হিজরি সনের শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা করে ঈদুল ফিতর উদযাপনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। রোজা শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার দেশের আকাশে শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে বুধবার (১০ এপ্রিল) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। আর চাঁদ দেখা না গেলে বুধবার ৩০ রোজা পূর্ণ হবে। সেক্ষেত্রে ঈদ হবে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল)।
বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭ টেলিফোন নম্বরে ফোন করে এবং ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২-৯৫৫৫৯৫১ নম্বরে ফ্যাক্স করে বা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
সূর্যগ্রহণের সময় রাসূল (সা.) যা করতে বলেছেন
জাহিলি যুগে মানুষ ধারণা করত, বিশ্বে কোনো মহাপুরুষের জন্ম বা মৃত্যু কিংবা দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ প্রভৃতির বার্তা দিতে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয়ে থাকে। ইসলাম এটাকে একটি ভ্রান্ত ধারণা আখ্যায়িত করেছে এবং ‘গ্রহণ’কে সূর্য ও চন্দ্রের ওপর একটি বিশেষ ক্রান্তিকাল বা বিপদের সময় বলে গণ্য করেছে। এ জন্য সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণের সময় মুমিনদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন এ সময়ে অন্য কাজকর্ম বন্ধ রেখে আল্লাহর তাসবিহ পাঠ, দোয়া, সালাত আদায় প্রভৃতি আমল করে থাকে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র’ আল্লাহর অন্যতম দুটি নিদর্শন। এগুলো কারো মৃত্যু কিংবা জন্মের জন্য ‘গ্রহণ’ হয় না, অতএব তোমরা যখন তা দেখবে তখন আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, তাকবির বলবে, সালাত আদায় করবে এবং সদকা করবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
সোমবার (৮ এপ্রিল) ভরদুপুরে বিরল মহাজাগতিক ঘটনার সময় চাঁদের ছায়া সূর্যকে ৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ড সম্পূর্ণ ঢেকে রাখবে। পূর্ণগ্রাস এই সূর্যগ্রহণের সময় উত্তর আমেরিকার তিন দেশে দিনের বেলাই নামবে রাতের অন্ধকার।
অধিকাংশ সময়ই আমাদের দেশের মানুষেরা অত্যন্ত আনন্দ আর কৌতূহল নিয়ে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ প্রত্যক্ষ করে থাকে। অথচ বিষয়টি আনন্দের নয়, ভয় ও ক্ষমাপ্রার্থনার।
সূর্য ও চন্দ্র যখন গ্রহণের সময় হয়, তখন আমাদের হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর চেহারা ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যেত। তখন তিনি সাহাবিদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়তেন। কান্নাকাটি করতেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।
আরবিতে সূর্যগ্রহণকে ‘কুসুফ’ বলা হয়। আর সূর্যগ্রহণের নামাজকে ‘নামাজে কুসুফ’ বলা হয়।
দশম হিজরিতে যখন পবিত্র মদিনায় সূর্যগ্রহণ হয়, রাসুল (সা.) ঘোষণা দিয়ে লোকদের নামাজের জন্য সমবেত করেছিলেন। তারপর সম্ভবত তার জীবনের সর্বাধিক দীর্ঘ নামাজের জামাতের ইমামতি করেছিলেন। সেই নামাজের কিয়াম, রুকু, সিজদাহ মোটকথা, প্রতিটি রুকন সাধারণ অভ্যাসের চেয়ে অনেক দীর্ঘ ছিল।
অবিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা প্রথমে যখন মহানবী (সা.)-এর এ আমল সম্পর্কে জানতে পারল, তখন তারা এটা নিয়ে বিদ্রূপ করল (নাউযুবিল্লাহ)। তারা বলল, এ সময় এটা করার কি যৌক্তিকতা আছে?
সূর্যগ্রহণের সময় চন্দ্রটি পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চলে আসে বলে সূর্যগ্রহণ হয়। ব্যস এতটুকুই! এখানে কান্নাকাটি করার কী আছে? মজার বিষয় হলো, বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় যখন এ বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু হলো, তখন মহানবীর (সা.) এই আমলের তাৎপর্য বেরিয়ে এলো।
আধুনিক সৌরবিজ্ঞানীদের মতে, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহ দুটি কক্ষপথের মধ্যবলয়ে রয়েছে এস্টিরয়ে (Asteroid), মিটিওরিট (Meteorite) ও উল্কাপিণ্ড প্রভৃতি ভাসমান পাথরের এক সুবিশাল বেল্ট, এগুলোকে এককথায় গ্রহাণুপুঞ্জ বলা হয়।
গ্রহাণুপুঞ্জের এইবেল্ট (Belt) আবিষ্কৃত হয় ১৮০১ সালে। এক একটা ঝুলন্ত পাথরের ব্যাস ১২০ মাইল থেকে ৪৫০ মাইল। বিজ্ঞানীরা আজ পাথরের এই ঝুলন্ত বেল্ট নিয়ে শঙ্কিত। কখন জানি এ বেল্ট থেকে কোন পাথর নিক্ষিপ্ত হয়ে পৃথিবীর বুকে আঘাত হানে, যা পৃথিবীর জন্য ধ্বংসের কারণ হয় কি না?
গ্রহাণুপুঞ্জের পাথর খণ্ডগুলোর মাঝে সংঘর্ষের ফলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথরখণ্ড প্রতিনিয়তই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। কিন্তু সেগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এসে জ্বলে ভস্ম হয়ে যায়। কিন্তু বৃহদাকার পাথর খণ্ডগুলো যদি পৃথিবীতে আঘাত করে তাহলে কী হবে?
এই দৃষ্টিকোণ থেকে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণের সময় মহানবীর (সা.) সেজদারত হওয়া এবং সৃষ্টিকুলের জন্য পানাহ চাওয়ার মধ্যে আমরা একটি নিখুঁত বাস্তবতার সম্পর্ক খুঁজে পাই। মহানবীর (সা.) এ আমলটি ছিলো যুক্তিসংগত ও একান্ত বিজ্ঞানসম্মত। তাই এটিকে উৎসব না বানিয়ে আল্লাহকে ভয় করুন। সালাত আদায় করুন।
সূর্যগ্রহণের নামাজ কিভাবে পড়ব-
আরবিতে সূর্যগ্রহণকে ‘কুসুফ’ বলা হয়। আর সূর্যগ্রহণের নামাজকে ‘সালাতুল কুসুফ’ বলা হয়। দশম হিজরিতে যখন পবিত্র মদিনায় সূর্যগ্রহণ হয়, রাসুল (সা.) ঘোষণা দিয়ে লোকদের নামাজের জন্য সমবেত করেছিলেন। সেই নামাজের কিয়াম, রুকু, সিজদাসহ সব রুকন সাধারণ অভ্যাসের চেয়ে অনেক দীর্ঘ ছিল। সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণকালে মুমিনদের করণীয় হচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে একত্র হয়ে সালাত আদায় করা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা। এ সালাত আদায় করা নফল। এই নামাজে আজান ও ইকামত দিতে হয় না। তবে লোকজন ডাকার জন্য ‘আস-সালাতু জামিয়া’ (নামাজ সমাগত) বা এ জাতীয় বাক্য ব্যবহার করে ডাকার অবকাশ রয়েছে। সমাবেশস্থলে জুমার নামাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমাম উপস্থিত থাকলে তিনি সূর্যগ্রহণের সালাত জামাতে আদায় করাবেন। আর ইমাম বা তাঁর প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকলে একা একা সালাত আদায় করা যাবে। এ সালাত অন্য সালাতের চেয়ে অধিক দীর্ঘ হওয়া উচিত। রাসুল (সা.) এ সালাতের কিরাত, কিয়াম, রুকু, সিজদাসহ অন্য আমলগুলোও অনেক দীর্ঘ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এ সালাতে কিয়াম, রুকু ও রুকু থেকে দাঁড়ানো অবস্থা অত্যধিক দীর্ঘায়িত করেছেন। এমনকি কিয়াম অবস্থায় প্রায় সুরা বাকারা তিলাওয়াত করার মতো সময় অতিবাহিত করেছেন এবং রুকু থেকে দাঁড়িয়ে এর চেয়ে তুলনামূলক কম সময় অবস্থান করেছেন। আর দ্বিতীয় রাকাত প্রথম রাকাতের চেয়ে ছোট করেছেন। তিনি কিয়ামের মধ্যে কিরাত ছাড়াও তাসবিহ, তাহলিল, তাকবির, তাহমিদ, দোয়া পড়েছেন বলে অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে। সালাত আদায় শেষ হলে সূর্য পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত দোয়া করতে হয়। হানাফি মাজহাবে অন্য সালাতের মতো এ সালাতেও প্রতি রাকাতে একটি মাত্র রুকু আদায় করতে হয়। শাফিয়ি মাজহাবে প্রতি রাকাতে দুটি রুকু করতে হয়। অবশ্য হাদিসের বর্ণনাগুলোতে এ সালাতে রাসুল (সা.) দুই বা ততোধিক রুকু করেছেন বলেই উল্লেখ রয়েছে। এ সালাতের রাকাত সংখ্যা দুই। তবে চার রাকাত বা তার বেশিও আদায় করা যায়। সে ক্ষেত্রে প্রতি দুই বা চার রাকাতের পর সালাম ফিরাতে হবে। সালাতের শেষে কোনো খুতবা পড়তে হয় না। কোনো কোনো বর্ণনায় রাসুল (সা.) কর্তৃক খুতবা পাঠের কথা বর্ণিত থাকলেও তা সালাতের সংশ্লিষ্ট হিসেবে নয়; বরং তা ছিল ‘গ্রহণ’ সম্পর্কে জাহিলি যুগের ভ্রান্ত ধারণা নিরসনের জন্য দেওয়া বিশেষ বিবৃতি। (আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারি)
নতুন টাকা কেনাবেচা জায়েজ না কি নাজায়েজ?
ঈদ উপলক্ষে আমাদের দেশে নতুন টাকা কেনাবেচার প্রচলন রয়েছে। বেশিভাগ মানুষ ঈদে সালামি দেওয়ার জন্য নতুন নোট ক্রয় করে থাকেন। তবে নতুন নোট কিনতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। যেমন : এক হাজার টাকার নতুন নোট বিক্রি করা হয় এক হাজার ২০ টাকায়। নতুন নোট কেনাবেচার ব্যাপারে কী বলে ইসলামে?
টাকার বিনিময়ে টাকা বেশ-কম করে কেনাবেচাকে নাজায়েজ বলেছেন আলেমরা। যেমন : ইসলামে এক প্রকারের দুটি জিনিস কমবেশি ক্রয়-বিক্রয় করা নাজায়েজ। তাই এ রকম লেনদেনে অতিরিক্ত অংশ সুদ হয়ে যায়। এ জন্য আলেমরা নতুন টাকা কেনাবেচাকে সুদি কারবারের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেন। তাই এ ধরনের ব্যবসায় জড়িত হওয়া কোনোভাবেই জায়েজ হবে না।
তবে অনেক উলামায়ে কেরাম অপারগতার ক্ষেত্রে নতুন টাকা সংগ্রহের পদ্ধতিকে জায়েজ বলেন। একেবারে অপারগতার ক্ষেত্রে নতুন টাকা সংগ্রহ করার পরিশ্রম বাবদ কিছু টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। এ জন্য শর্ত হলো, স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দিতে হবে যে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া হচ্ছে নতুন টাকা সংগ্রহের পারিশ্রমিক হিসেবে, নতুন টাকার মূল্য হিসেবে নয়।
কাগজের নোট যেহেতু পণ্য নয়, ইসলামে এই ব্যবসার অনুমোদন নেই। এখানে অতিরিক্ত অংশটি বা লভ্যাংশটি সুদ হিসেবে গণ্য হবে। (আদদুররুল মুখতার: ৫/১৭১-১৭২; বুহুসুন ফি কাজায়া ফিকহিয়্যা: ১/১৬৩)
একই দেশের মুদ্রা কম-বেশি করে বিক্রি করলে ওই ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ হবে না। (হিদায়া, কিতাবুল বুয়ু, বাবুর রিবা: ০৩/৮৫; মুসতাদরাক আলাস সাহিহাইন: ০২/৬৫-৬৬; শারহু মাআনিল আসার: ৫৫৫৪; সুনান দারু কুতনি: ৩০৬০)
তবে, ছেঁড়া-ফাটা টাকা দিয়ে ভালো টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অপারগ অবস্থায় (যেমন ব্যাংক বন্ধ, টাকাও দরকার ইত্যাদি) বদলকারীর পরিশ্রম ও ডাক খরচ বাবদ কিছু টাকা বেশি নেওয়া যেতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে, ছলনার আশ্রয় ছাড়া স্পষ্টভাবে ‘বাবত’ উল্লেখ থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছরই নতুন নোট টাকার বাজারে ছাড়ে। তবে নতুন নোট সংগ্রহের জন্য অনেক সময় ব্যাংকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আবার অনেকের পক্ষে অফিস সময়ে নতুন নোট সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। তাই অনেকে সুবিধাজনক সময়ে ঝামেলাহীনভাবে অস্থায়ী দোকানগুলো থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করে থাকেন।